শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :::
কক্সবাজারের টেকনাফ নয়াপাড়া ও উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার ফলে পুরো শিবির এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। একদিকে রোহিঙ্গা শিবিরে বিরাজ করছে দারিদ্রতা, ক্ষুধা, অপুষ্টিজনিত সমস্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে আবাসন সমস্যাও। নতুন করে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে শরনার্থী ক্যাম্প ছাড়াও পুরো কক্সবাজার জেলাবাসির জীবন যাত্রায় এবং খাদ্য, চিকিৎসা ও আবাসনে চরম প্রভাব পড়েছে।
জানা যায়. গত ১২ নভেম্বর মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে পড়ে মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে ধেঁয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি টেকনাফ নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ও অনিবন্ধনকৃত লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রত্যন্ত জনপদে ডুকে পড়েছে। গত ১২ নভেম্বর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে সীমান্ত পথে উখিয়ায় ডুকে পড়ে অন্তত ৩৫ হাজার রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে শরণার্থী শিবির, বিভিন্ন বাসা বাড়ি সহ টেকনাফ লেদার আনরেজিষ্টার রোহিঙ্গা টালে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে জেলাবাসির মাঝে চরম প্রভাব পড়েছে।
এতে করে রোহিঙ্গাদের আবাসন, ক্ষুধা, দারিদ্র, স্যানিটেশন সহ বহুমুখী সমস্যা ভারে রোহিঙ্গার শিবিরের নাগরিক জীবন চরম সংকটাপন্ন।
বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবির অভ্যন্তরে খাদ্য, স্বাস্থ্য, আবাসন সংকটের মুখে পড়ে এক প্রকার ত্রাহি অবস্থায় পড়েছে।
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির অভ্যন্তরে কোন কাজ কর্ম না থাকায় এমনকি তালিকাভুক্ত শরনার্থী না হওয়ায় তারা রেশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে।
অপর দিকে টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরে রয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সহ রোহিঙ্গারা কোন কাজ কর্ম না থাকায় গ্রামে গঞ্জে ঢুকে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে দিন মজুর হিসাবে কাজ করছে। কাজ না পেলে ক্ষুধার জ্বালায় বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের দিকে পা বাড়ায়। যার ফলে দিন দিন উখিয়া টেকনাফের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
কুতুপালং শরনার্থী শিবির ইনচার্জ আরমান শাকিব টেলিফোনে জানান বলেন, অনিবন্ধিত শিবিরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীর কথা তিনি শুনেছেন। তবে নিবন্ধিতদের এলাকাতে একজনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নেই। এখানে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।
তিনি আরও জানান, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ১৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছেন। আর এই শিবিরের তিনদিক ঘিরে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু সেখানে তার যাওয়ার বা এ নিয়ে কোনো কিছু করার ক্ষমতা তার নেই।
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে উখিয়া ও টেকনাফের শরনার্থী শিবির সহ গ্রামাঞ্চলে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
জীবিকার সন্ধানে রোহিঙ্গার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে চলার কারণে জনসংখ্যার দিক থেকে উখিয়া ও টেকনাফ হয়ে পড়েছে ভারসাম্যহীন। আর এ নীতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা দলে দলে দেশে প্রবেশ করে কুতুপালং শরনার্থী শিবির ও টেকনাফের নয়াপাড়া শিবির এলাকার আশপাশে অবস্থান করছে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফ বাসীর জন্য বিষপোঁড়া হয়ে দাঁিড়য়েছে। তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সংশিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পাঠকের মতামত: